বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষিত।
- কাউসার আলম কনক, কর্মসূচি পরিচালক, এডাব।
- ADAB
- December 10, 2023
- 4:15 pm
- No Comments
১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহিত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর জাতিসংঘ সদস্যভ‚ক্ত দেশসমূহ এই দিবসটি স্বারম্ভরপূর্ণভাবে পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে “সমতা, অসমতা দূর করে, মানবাধিকারকে সমন্নুত রাখে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব
মানবাধিকার দিবস পালন করে।
এ বছরের প্রতিপাদ্যটি ছিল বেশ তৎপর্যপূর্ণ। কারণ একদিকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতিতে মানুষের জীবনযাত্রা যখন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে, ঠিক সময়ে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস একটি আলাদা তৎপর্য বহন করে বৈকি। পৃথিবীতে প্রতিটি মানব সন্তানই সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। কিন্তু, জন্মের পর থেকেই একজন শিশু বড় হতে থাকে, নানা বৈষম্যের মধ্য দিয়ে। প্রথমেই শুরু পরিবারের ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে বৈষম্য দিয়ে। পরিবারে জন্ম ছেলে শিশুটি বেশী সুযোগ সুবিধা নিয়ে বড় হতে থাকে। আর একই পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়ে শিশুটি বড় হতে থাকে অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে। শিশুকাল থেকে একজন মেয়ে শিশু যে বৈষম্য দেখে আসছে, তা তাকে বহন করতে হয় আজীবন। যা, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের লংঘন।
যদিও মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকার ও জনগণ এই সনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তা মেনে চলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সুতরাং সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠির প্রত্যেকের শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রগতির ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন নাগরিকের অধিকার ও
স্বাধীকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন ও সমমর্যাদা সম্পন্ন এবং নিজ মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশের অধিকারী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জন্মস্থান, ধনী, দরিদ্র কোন কিছুই একজন নাগরিকের মৌল মানবাধিকার হরণ করতে পারবে না। সামাজিক মানুষ হিসাবে প্রত্যেক, মানুষেরই সামাজিক নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। নিজ মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনভাবে বিকাশের জন্য সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, অথবা সংগঠনের সম্পদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক অধিকারের দাবীদার।
পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী, খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থান, চিকিৎসা ব্যয়সহ অন্যান্য সামাজিক দায়-দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে মিটিয়ে পরিবারের যথোপযুক্ত জীবন-মান বজায় রাখার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পেক্ষাপটে নানা কারণে আয় এবং ব্যয়ের পার্থক্যের ফলে পরিবারের অভিভাবকের পক্ষে অন্যান্য সদস্যদের যথোপযুক্ত জীবন মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বাজার অব্যবস্থাপনা ও দ্রব্য মূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতি, মানুষের আয় কমে যাওয়ায় চাহিদামত খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনসহ খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ও অসুস্থ হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছে। ছেলে-মেয়েদের মানসম্পন্ন শিক্ষা, প্রয়োজনীয় চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক মেধা বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। ত্রমেই আমরা মেধাহীন ও দুর্বল, ভগ্ন স্বাস্থ্য সম্পন্ন জাতিতে পরিণত হচ্ছে।
সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনার অভাবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে পণ্য মুজদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শাসনকার্য
পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের প্রথম এবং অন্যতম কাজ হলো এসব অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা তৈরী করা। মানুষ যাতে ন্যায্য দামে পছন্দমত পণ্য ক্রয় করতে পারে। সাধারণ মানুষের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা। যা, মানুষের মানবাধিকারের আওতাভূক্ত। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে তাদের প্রয়োজনমত জিনিস ক্রয় করে, মৌলিক চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য চাহিদা পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। খাদ্য চাহিদা পূরণ করে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানসম্পন্ন বাসস্থান ও চিত্ত বিনোদনের মাধ্যমে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে গড়ে উঠার অধিকার লাভ করবে। তাতেই শিক্ষিত, প্রতিভাবান, ও মেধা সম্পন্ন জাতি হিসাবে বিকশিত হবে। যা একজন নাগরিকের অন্যতম মানবাধিকার বলে বিবেচিত।
পাশাপাশি শোভন কর্মসংস্থান, ন্যায্য মুজুরী, সামাজিক নিরাপত্তা নারীর অধিকার প্রভৃতি একজন নাগরিকের মানবাধিকার হিসাবে বিবেচিত। রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার নাগরিকদের এসব অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ। একজন নাগরিকের এসব অধিকার লঙ্ঘিত হলে সরকারের উচিৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।