বিশ্ব এনজিও দিবস ২০২৪ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত।
- একেএম জসীম উদ্দিন, পরিচালক, এডাব।
- ADAB
- February 27, 2024
- 3:56 pm
- No Comments
প্রাককথন: প্রতি বছর ২৭শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিশ্ব এনজিও দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব এনজিও দিবস এর একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বিশ্ব এনজিও দিবস সারাবিশ্বে সমাজ উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের জন্য একটি বৈশ্বিক উপলক্ষ হিসেবে উদযাপিত হয়। এটি এনজিওদের মাথাউঁচু করে দাড়াবার স্বীকৃতি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনজিওদের উন্নয়নের অংশীদারীত্বের স্বীকৃতি। বর্তমানে বিশ্বের ৮৯ টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ এনজিও’র সুতিকাগার হলেও এখানে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়না।
বিশ্ব এনজিও দিবসের পেছনের গল্প: বিশ্ব এনজিও দিবসের ধারণাটি ২০০৯ সালে সামাজিক উদ্যোক্তা Marcis Liors
Skadmanis’র মাধ্যমে প্রথম উত্থাপিত হয়। তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারি উদ্যোগসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতির জন্য একটি দিবস সুনির্দিষ্ট করার বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন এবং পরবর্তিতে ২০১০ সালে, বাল্টিক সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলের এনজিওদের ফোরাম “বাল্টিক সি এনজিও ফোরাম” আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্ব এনজিও দিবস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি খুব দ্রুতই বৃহত্তর এনজিও সমাজের সমর্থন পায় এবং ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আনুকূল্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো বিশ্ব এনজিও দিবস পালিত হয়।
দিবসের প্রতিপাদ্য: প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এনজিওদের অবদানের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত করে বিভিন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে দিবসটি পালিত হতে থাকে। ২০১৫ সালে “কাউকে পিছনে ফেলে নয়” থেকে শুরু করে প্রতিবছরই নতুন প্রতিপাদ্যকে উপলক্ষ করে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বিগত বছরে দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “মানবাধিকারের অগ্রগতিতে এনজিওগুলির ভূমিকা এবং প্রভাব” এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনজিওদের ভূমিকা”। এ পর্যন্ত, প্রতিটি প্রতিপাদ্য এনজিওদের বহুমুখী কাজ ও বহুমাত্রিক অবদানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বিশ্ব এনজিও দিবসের তাৎপর্য: বর্তমানে বিশ্ব এনজিও দিবস বিশ্বব্যাপী এনজিও, সমাজ, সরকার এবং উদ্যোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সমূহের আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্ট এবং প্রচারণার মাধ্যমে পালিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচার করে বিশ্বব্যপী এর অভিযাত্রাকে প্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সকলস্তরের মানুষকে এর সাথে সংযুক্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়। এনজিওদের অগ্রসরতাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করা, এনজিওদের চলার পথে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও বাধাসমূহকে দূর করার জন্য বিশ্বব্যপী ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে এনজিওদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি ও সমর্থনের উপর জোর দিয়ে এ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই দিবসটি সামাজিক উন্নয়ন খাতের সাথে সরকারি বেসরকারি ও অন্যান্য খাতের মধ্যে কার্যকর যোগযোগ, সহযোগিতা এবং সমন্বয় বাড়ানোর উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে এনজিওদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে পৌঁছানোর একটি অনুষঙ্গ হিসাবে কাজ করে। “বিশ্ব এনজিও দিবস” বিশ্বের সকল মানুষসহ পরিবেশ ও ভ‚-প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক বিষয় সমূহকে বেগবান করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং আরও টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে, পাশাপাশি একটি ঐক্যবদ্ধ পদ্ধতিতে নায্য ও সাম্যতাভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।
আমাদের প্রত্যাশা: বাংলাদেশের এনজিও খাত বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হলেও বিশ্ব এনজিও দিবস বাংলাদেশে সেভাবে পালিত হতে দেখা যায়না। আমরা মনে করি এ দিবসটি বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের অন্যতম “বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ মডেল” বিশ্বের বহুদেশে অনুকরণ ও অনুসরণ করা হয়। আমরা এনজিও কমিউনিটি, বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন
সহযোগীসহ সকলের কাছে আহবান জানাই বিশ্বে র অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও যেন কাঙ্খিত মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং জাতিসংঘের অন্যান্য নির্ধারিত কর্মসূচির সাথে এটিকেও যুক্ত করে নেয়া হয়। এ দিবস পালন শুধুমাত্র এনজিওগুলির প্রচেষ্টাকে সম্মান করবে না বরং তাদেরকে আরও উৎসাহিত করবে এবং সকলের জন্য আরও ন্যায্য, ন্যায়সংগত ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ও নিবেদনকে আরও অর্থবহ ও ফলদায়ক করবে।